সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫ - ১৫:২৪
ইসরাইলি পত্রিকার স্বীকারোক্তি: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ক্রমবর্ধমান, যুদ্ধ আসন্ন

ইসরাইলি মূল্যায়নে ক্রমশই বলা হচ্ছে যে ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন সংঘাত আর কেবল সময়ের অপেক্ষা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসরাইলি মহলে এই ধারণা আরও শক্ত হয়েছে যে তেহরানের সঙ্গে মুখোমুখি উত্তেজনা খুব শিগগিরই নতুন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। বিশেষত সাম্প্রতিক ইঙ্গিতগুলো দেখাচ্ছে যে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো অক্ষত রাখতে সক্ষম হয়েছে।

সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আক্রমণ সত্ত্বেও ইরানের পারমাণবিক মজুত নিরাপদ আছে এবং তেহরান দ্রুতগতিতে তার ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নে ব্যস্ত।

আমেরিকান দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে ইরানের ওপর পরিচালিত হামলাগুলো কখনোই সেই মাত্রায় ক্ষতি করতে পারেনি, যা সে সময় প্রচার করা হয়েছিল।

পত্রিকাটি ইসরাইলি সূত্রের বরাত দিয়ে আরও জানায় যে ইরানের ইউরেনিয়াম মজুত একটি গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং “ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানাগুলো দিন-রাত সক্রিয় রয়েছে।”

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির (JCPOA) সময়সীমা গত মাসে শেষ হওয়ায় সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয়েছে এবং নতুন কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগও স্থগিত হয়ে আছে। বিভিন্ন মূল্যায়ন বলছে, ইরান ‘কোহ তাবার’ নামে একটি নতুন সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় কাজ করছে যেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

আন্তর্জাতিক সংকটগোষ্ঠীর ইরান প্রকল্পের প্রধান আলী ভায়েজ বলেন, ইরানের কারখানাগুলো বিরতিহীনভাবে কাজ করছে এবং তেহরানের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া পূর্বের অভিযানগুলোর তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে। তার দাবি, সম্ভাব্য পরবর্তী হামলায় ইরান প্রায় দুই হাজার ক্ষেপণাস্ত্র একবারে নিক্ষেপ করতে পারে; গত জুনের মতো বারো দিনে পাঁচ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বদলে এবার আঘাতের মাত্রা হতে পারে আরও ব্যাপক।

সিএনএন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে ইরান পুনরায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন শুরু করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে চীন থেকে ইরান ১০ থেকে ১২টি চালান পেয়েছে, যাতে ছিল সোডিয়াম পারক্লোরেট—কঠিন জ্বালানিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির অপরিহার্য উপাদান।

মোট উপাদানের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার টন বলে জানানো হয়েছে, যা দিয়ে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

ইসরাইলের আপত্তি সত্ত্বেও চীন এসব চালান পাঠানো অব্যাহত রেখেছে এবং তাদের দাবি, উপাদানগুলো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।

গোপন তথ্যসূত্র জানায়, ইরান আগের ভাণ্ডারের প্রায় অর্ধেক (প্রায় ২৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র) পুনরুদ্ধার করেছে এবং সম্ভাব্য নতুন উত্তেজনার জন্য তার পরিসর আরও সম্প্রসারণ করছে।

ফাইন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ইরানের অধিকাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম যুদ্ধের ক্ষতি থেকে অক্ষত রয়েছে। তার দাবি, তেহরান বর্তমানে ৪০০ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধরে রেখেছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকায় ইসরাইলি মূল্যায়নে বলা হচ্ছে যে অঞ্চল নতুন এক উত্তেজনার দোরগোড়ায় রয়েছে। তাদের ধারণা, নতুন উত্তেজনা কোনো গোপন স্থাপনা থেকে অথবা আকস্মিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমেও শুরু হতে পারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha